মোঃ কাজল ইব্রাহিম, বিশেষ প্রতিনিধি
গাজীপুরের কাশিমপুরের ব্লু ক্রিয়েশন লিমিটেড কারখানায় অনুমোদনহীন জূট বয়লার ব্যবহারের কারণে স্থানীয় এলাকায় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি বেআইনিভাবে জুট বয়লারে বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত জুট ব্যবহার করছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই জুট বয়লারে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদানগুলো মানুষের শরীরে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের জুট ব্যবহারের ফলে ক্যান্সারসহ প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যাসহ যক্ষ্মা, কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো রোগের সম্ভাবনা রয়েছে, যা স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্যকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, বয়লার থেকে নির্গত বিষাক্ত তরল সরাসরি ড্রেনের মাধ্যমে নদীতে ফেলা হচ্ছে, যা আশপাশের পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নদীর পানি দূষণের ফলে মাছ, গাছপালা, চাষাবাদ, এবং জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি, নদীর আশপাশে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হয়েছে, যা মৎস্যজীবী ও কৃষকদের জন্য গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা নদীর দূষণ রোধে পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পিভিসি কালার সেকশনে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় সাধারণ শ্রমিকরা নিয়মিত শ্বাসকষ্ট, কাশি, সর্দি, এবং শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়াও, এই রাসায়নিকের সংস্পর্শে তাদের হাতে-পায়ে ঘা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে, প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসা সহায়তা বা ছুটির ব্যবস্থা না থাকায় তাদের সমস্যা আরও গুরুতর হচ্ছে।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিরসনে স্থানীয় জনগণ সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। ব্লু ক্রিয়েশন লিমিটেডের অবৈধ কার্যক্রম ও পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনসহ এনএসআই, ডিবি এবং স্থানীয় প্রশাসনের তদন্তের আহবান জানানো হয়েছে।
কাশিমপুর মেট্রো থানার অধীনে ৬ নং ওয়ার্ডের নামা বাজার সংলগ্ন নদীর পাড় রোডে ব্লু ক্রিয়েশন লিমিটেড অবস্থিত। স্যাটেলাইট চিত্র ও অন্যান্য তথ্যের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা সম্ভব।
প্রতিষ্ঠানের এডমিন অফিসার শারমিন ম্যাডামকে একাধিকবার সতর্ক করা হলেও তিনি যথাযথ গুরুত্ব দেননি। তিনি ব্লু ক্রিয়েশন লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগের দায়িত্বে থাকার পরও কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেননি। উপরন্তু, তিনি সরকারি রাস্তা ব্যবহার করে ব্যক্তিগত যানবাহন রাখছেন, যা আইনবিরুদ্ধ। সড়ক পরিবহন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রতি এই বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে।
এলাকার সাধারণ মানুষ এই ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশির মতো রোগ থেকে মুক্তির আশায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছেন। নদীর পানি দূষণ থেকে শুরু করে স্থানীয় কৃষি, মৎস্য, এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ দৃষ্টি প্রয়োজন। ফ্যাক্টরির কর্মচারীরাও তাদের ন্যায়বিচার ও অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন, সে ব্যাপারে প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি প্রত্যাশিত। জনস্বার্থে এই সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে, যেন দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ জাকির হোসেন (মনু)
zakirhossain215@gmail.com
01712364264
All rights reserved © 2024