বাংলার আলো টিভি ডেস্কঃ
বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে শুধু ঠাকুরগাঁও সদরে ৭ হাজার আসামী করা হয়েছিল। ১০০ এর উপরে মামলা করেছিল তারা। সারা দেশে কয়েক লাখ মামলা দিয়েছে। ৭শ মানুষকে গুম করেছে। তারা আয়নাঘর তৈরী করেছিল। ধরে ধরে নিয়ে গিয়ে সেখানে অত্যাচার করেছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। ৭ বছর, ৮ বছর এভাবে ১৫ বছর ধরে সেখানে মানুষজনকে আটকে রাখতো। এ কাজগুলি করতো শেখ হাসিনা। আজকে উনি এমনি এমনি পালিয়ে যায়নি। আজকে উনি এত অন্যায় করেছে, পাপ করেছে যে তার পালানো ছাড়া আর কোন পথ ছিল না। তাই এদেশের মানুষ যখন জেগে উঠেছে। আন্দোলন করেছে, বুকের মধ্যে বুলেট খেয়েছে তখন তার পালানো ছাড়া গতি ছিল না।
তিনি আজ ২৩ ডিসেম্বর সোমবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শীবগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ মাঠে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় উপরোক্ত কথা বলেন।
২৪ এর আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, ২৪ এর আন্দোলনে ঠাকুরগাঁওয়েরও ৪ জন ছেলে শহীদ হয়েছেন। পরে মোট ১৩ জন শহীদ হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন এখনও অনেকের চিকিৎসা চলছে। আমার ছেলের গায়ে গুলি লাগলে আমি বাবা হয়ে কি স্থির থাকতে পারি। বিএনপি ১৫ বছর লড়াই করেছে বলে আজকে ছাত্ররা পেরেছে। ১৫ বছর অত্যাচার নির্যতন সহ্য করে আমরা একটি পরিবেশ তৈরী করেছি। এ জন্য সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাই। এটাই হচ্ছে মুক্তির পথ। আমরা তো বাড়াবাড়ি করতে চাইনি। কিন্তু শেখ হাসিনা ভারতে বসে আবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছে। বিভিন্ন দেশের বাঙালি মানুষদের আবার বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ করেছিলাম একটা স্বাধীন দেশ পাবো বলে। পাকিস্তানিরা আর আমাদের উপর অত্যচার করতে পারবে না। তাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম যুদ্ধ করে। রক্ত দিয়েছিলাম, লক্ষ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিলো। আমাদের হিন্দু-মুসলমান ভাইয়েরা আমরা সবাই ভারতে চলে গিয়েছিলাম। আমরা সেটা ভুলি নাই। আমরা ভারতে উদ্বাস্তু হয়ে গেলাম। আমাদের দেশের বাড়িঘর লুট হয়ে গেছে। পাকিস্তানি হায়েনারা লুট করে নিয়ে গেছে। পরে আমরা যখন স্বাধীন হলাম যুদ্ধ করে, একটা দেশ পেলাম বাংলাদেশ।
আমরা ধারণা করেছিলাম বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান, পাকিস্তান থেকে এসে আমাদের সুন্দর একটি দেশ দিবেন। যেখানে আমরা পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে ভাই-ভাইয়ের মত বাস করবো। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা সেটা পাই নাই। স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই কিন্তু শুরু হয়ে গেছে এ দেশে হানাহানি, কাটাকাটি, খুন, জখম, হিংসা। যে নেতাকে মানুষ ভালোবাসতো, যে দলটাকে মানুষ ভালোবাসতো সে দলটাই এদেশের মানুষের উপর চেপে বসলো। ঐ সময় আ স ম আব্দুর রব এর একটা দল ছিল জাসদ, সেটা আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে আসে। কারণ তারা মনে করেছিল আওয়ামী লীগ ভালোমতো দেশ চালাতে পারছে না। তারা চুরি করছে, ডাকাতি করছে, মানুষকে খুন, জখম, গুম করে দিচ্ছে, তখন জাসদ সেখান থেকে বের হয়ে আসে। ঐ সময় জাসদের প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে তারা হত্যা করেছে।
স্বাধীনতার ঘোষনা বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যুদ্ধ করে যে একটা বাংলাদেশ পেয়েছিলাম ঐ সময় স্বাধীনতার যে ঘোষনা দিয়েছিলেন সেটা কি আপনারা জানেন কে দিয়েছিল ? এ ঘোষনা কিন্তু কোন রাজনৈতিক দল দেয়নি। কোন ব্যক্ত দেয়নি। ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এ জন্য আমরা বলি যে স্বাধীনতার ঘোষনা জিয়াউর রহমান দিয়েছিলেন। সেই জিয়াউর রহমান যখন দায়িত্ব নিলেন তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন। তার আগে শেখ মুজিব কিন্তু সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছিলেন। একনায়েকতন্ত্র বাকশাল গঠন করেছিল। তখন সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে মানুষের কথা বলার যে স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতাকে তারা নষ্ট করে দিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে আমরা যখন স্বাধীনতা পেলাম তখন এরশাদ ৮১ সালে জোর করে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিলেন। আমাদের ইতিহাস, অতীত জানা দরকার, রাতারাতি কিছু হয়ে যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে আমরা লড়াই করেছি সংগ্রাম করেছি এ দেশের শান্তির জন্য।
আওয়ামী লীগ যখন দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসলো ২০০৯ সালে আবারও দেশের মানুষের উপর শুরু হলো অত্যাচার-নির্যতন। তবে এবারে কায়দাটা ছিল ভিন্ন। এবার তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালুর জন্য কাজ করেছে। বাংলাদেশের তত্তাবধায়ক সরকার ছিল। ভোটের সময় একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকবে। এটাতে আমরা ৩ বার নির্বাচন করেছি খুব ভালো ফলাফল পেয়েছি। কিন্তু দুঃখের কথা আওয়ামী লীগ সরকার ২০১২ সালে তারা এটাকে বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু করলো। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকবে আর নির্বাচন হবে। ফলে আওয়ামী লীগ একাই ভোট দিয়েছে অন্য কাউকে ভোট দিতে দেয় নাই। ফলে আমরা তিন তিনবার ভোট দিতে পারি নাই। আওয়ামী লীগের সময়ে সাংবাদিকেরা তাদের বিরুদ্ধে কিছু প্রকাশ করতে পারেনি। আমরা যেটা বলেছিলাম সেটাও প্রকাশ করতে দেয়নি। সাংবাদিকদের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করেছিল।
অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, আজকে সুযোগ এসেছে। আমরা আগের অবস্থাকে পরিবর্তন করবো। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৬ বছর জেলে ছিলেন। তাকে যেখানে রেখেছিলেন সেখানে মানুষ থাকার মতো পরিবেশ ছিলো না। তাকে ধীরে ধীরে বিষ খাওয়ানো হয়েছে। যাক এখন অন্তত তিনি চিকিৎসার একটু সুযোগ পাবেন। আর আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে তার বিরুদ্ধে হত্যা হামলার মামলার আসামী করে দেশ থেকে বিদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। তাহলে পার্লামেন্ট দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট হলে একটা চেক এন্ড ব্যালেন্স হয়। জুডিসিয়াল কশিনের কথা বলা হয়েছিল। তখন আমাদের নেতা তারেক রহমান ৩০ দফা দিয়েছিলেন সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মিলে দিয়েছিলেন। কৃষকদের বিরুদ্ধে কোন কারসাজি আমরা চাই না। শ্রমিকেরা যেন তাদের ন্যয্য মজুরী পায় সেটা চাই। আমরা দিনের শেষে একটু শান্তিতে ঘুমাতে চাই। আপনারা কি সত্যি সত্যি পরিবর্তন চান নাকি আবারও আওয়ামী লীগের নৌকায় ফেরত যেতে চান। তাহলে ৫ আগষ্ট সবাই মিলে যেভাবে রাস্তায় নেমেছিলেন আবারও সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। অধিকার আদায়ের জন্য, ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য, ভাতের অধিকারের জন্য এবং ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য।
আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের যে ভাই-বোনেরা আছেন আমাদের কোন পার্থক্য নেই। আমরা যদি কখনও সুযোগ পাই জনগনের ভোটের মাধ্যমে যদি আমরা কখনও রাষ্ট্রের দায়িত্বে যেতে পারি তাহলে আমরা সকল ধর্মের সকল অধিকারকে নিশ্চিত করবো। আমরা নিশ্চিত করবো কৃষকেরা যাতে ফসলের ন্যার্য্য মূল্য পায়। আর বিনা কারনে গায়েবী মামলা যাতে করা না হয় সেটা নিশ্চিত করবো। যারা দায়িত্বশীল জায়গায় আছেন তারা বিভ্রান্তমূলক কথা বলবেন না। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। শান্তিপুর্ন একটা নির্বাচন করতে চাই। সে নির্বাচনে ভোট দিয়ে আমাদের যাকে পছন্দ তাকে নির্বাচিত করতে চাই। তারা আমাদের সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন আনবে। ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করবে, গুন্ডাবাজি বন্ধ করবে, দখলবাজি বদ্ধ করবে।
আমরা সবাইকে নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। আসুন সবাই মিলে সেই লক্ষ্যে কাজ করি। এ দেশ আপনার, এ মাটি আপনার, আপনাকে দেশের জন্য ও মানুষের জন্য প্রয়োজন হলে লড়াই করতে হবে। সকলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আমাদের নেতা তারেক রহমানসহ যারা আছে তারা দেশে ফিরে আসুক এটা আমরা চাই। আমরা চাই আবারও বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আসুক।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি মোঃ আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন, ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র মির্জা ফয়সল আমীন, ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আল মামুন আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর করিম, ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, সুলতানুল ফেরদৌস নম্র চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, ঠাকুরগাঁও পৌর বিএনপি’র সভাপতি মোঃ শরিফুল ইসলাম শরিফ, ঠাকুরগাঁও জেলা যুবদলের সভাপতি চৌধুরী মাহেবুল্লাহ আবু নুর, ঠাকুরগাঁও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মোঃ কায়েস সহ জামালপুর ইউনিয়ন বিএনপির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ এবং বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিন।