আব্দুল্লাহ আল মামুন, হরিনাকুন্ডু ঝিনাইদহঃ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই যেখান আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সুবিচার কায়েম হবে। যেখানে মানুষের মধ্যে কোন বৈষম্য থাকবে না। যে যার ন্যায্য পাওনা তার হাতে পেয়ে যাবে। যুবকদের হাতে কাজ তুলে দেওয়া হবে। জাতি গঠনে যুবকরা ভূমিকা পালন করবে। বেকারত্বের অভিশাপে আর একটা যুবককেও আত্মহত্যা করতে হবে না। যুবককে চাকুরী পাওয়ার জন্য কোন দুষ্টু লোকের কাছে টাকা ঘুস দিতে হবে না।
আজ ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ঝিনাইদাহ জেলার উজির আলী কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।জেলা আমির অধ্যাপক আলী আজম মোঃ আবু বকরের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল আওয়ালের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য যশোর-কুষ্টিয়া জোনের অঞ্চল তত্ত্বাবধায়ক মোবারক হুসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মতিউর রহমান, জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক আঃ আলীম, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ আঃ হাই, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আবু তালিব, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এইচএম আবু মুসা, ঝিনাইদহ জেলা শিবিরের সভাপতি মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শৈলকুপা থানা আমির মতিউর রহমান, হরিণাকুন্ডু উপজেলা আমির মাস্টার বাবুল হোসেন, সদর থানা আমির মতিয়ার রহমান, কালিগঞ্জ উপজেলা আমির মাওলানা অলিউর রহমান, কোটচাঁদপুর উপজেলা আমির মাস্টার আজিজুর রহমান, মহেশপুর উপজেলা আমির অধ্যাপক ফারুক আহমেদ।
জেলার লক্ষাধীক কর্মী উক্ত সন্মেলনে যোগ দেন। এসময় পুরো জেলা সম্মেলনের নগরীতে পরিণত হয়। কর্মী সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শহীদ ইবনুল ইসলাম পারভেজের বাবা মাস্টার জাহাঙ্গির হোসেন।
মাওলানার শফিকুল ইসলামের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সম্মেলনের সুচনা হয়।এসময় তিনি একটি শিশুকে কাছে টেনে নেন। কোলে তুলে নিয়ে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দেন। এসময় পুরো ময়দানজুড়ে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মাঠ থেকে লাখো কণ্ঠে ভেসে আসে নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার ধ্বনি।
ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, মনে আমাদের অনেক কষ্ট। আমাদের ওপর জুলুমের তান্ডব চালানো হয়েছে। এক এক করে আমাদের শীর্ষ ১১ জন নেতাকে আমাদের বুক থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বানানো সাক্ষি আর ক্যাঙ্গারো কোর্ট বসিয়ে আমাদের লোকজনকে হত্যা করা হয়েছে। মহান রবের দরবারে আমরা মামলা দায়ের করেছি। জানি না এই জীবনে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারবো কি-না। আমরা আমাদের কার্যালয়ে পর্যন্ত যেতে পারিনি।্ আমরা ৫ জন মানুষ একসাথে বসতে পারছিলাম না। বাপ-বেটা একসাথে বসে ভাত খাচ্ছিল দুপুর বেলা তাদের তুলে নিয়ে বলে তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি সাতক্ষীরা জেলার উদাহরণ টেনে বলেন, আপনাদের পাশেই সাতক্ষীরা জেলা। বুলডুজার চালিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর মাটির সাখে মিশিয়ে দিয়েছে। অন্যায়ভাবে আমাদের নিবন্ধন এবং প্রতীক কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের ১লা আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দিশেহারা সরকার আমাদেরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আল্লার কি কাজ ৪ দিনের মাথায় আল্লাহ তায়াল তাদেরকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু আমরা জাতিকে দেশকে ভালবাসি। আমরা আইন হাতে তুলে নিয়ে কোন প্রতিশোধ নিতে চাই না। আমরা যা চাইবো আইনকে মান্য করে আইন আদালতের মাধ্যমে চাইবো। আমরা আইন আদালতের কাছে কোন পক্ষপাতিত্ব চাই না। আমরা চাই শুধু ন্যায় বিচার। আমরা কোথাও শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো কাজ করবো না।
ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এমন একটা দেশ চায়, যেখানে আল্লাহ তায়ালার বিধান অনুযায়ী সামাজিক সুবিচার কায়েম হবে। যেখানে মানুষের মধ্যে কোন বৈষম্য থাকবে না। যে যার ন্যায্য পাওনা তার হাতে পেয়ে যাবে। যুবকদের হাতে কাজ তুলে দেওয়া হবে। জাতি গঠনে যুবকরা ভূমিকা পালন করবে। বেকারত্বের অভিশাপে আর একটা যুবককেও আত্মহত্যা করতে হবে না। যুবককে চাকুরী পাওয়ার জন্য কোন দুষ্টু লোকের কাছে টাকা ঘুস দিতে হবে না।
আমাদেরকে যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেন আমার মায়েরা থাকবেন মায়ের মর্যাদায়, বোনেরা বোনের মর্যাদায়, ওরসজাত মেয়ের মর্যাদায়। তাদের ইজ্জতের ওপর হাত দেওয়ার সাহস কোন দুষ্ঠু কিংবা লম্পটের হবে না। সকল ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মেল কার্যকলাপ ইজ্জত সম্মান এবং নিরাপত্তার সাথে করতে পারবে।
আজ দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী। কারা দ্রব্যের দাম বাড়ায়। সবাই জানে। সরকারের কাছে আমাদের স্পষ্ট বার্তা সিন্ডিকেট তছনছ করে দেন। জনগণকে শান্তি দেওয়ার জন্য যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করুন। জগগণের কাঙ্খিত সংস্কার করুন। জনগনের ৩৬ কোটি হাত আপনাদের সাহায্য করবে ইন শা আল্লাহ। তিনি আহ্বান জানান অতীতের শাসকরা যা করেছে আমরা যেন তা না করি।
তিনি আবারো গর্ব করার পতনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলে যারা গর্ব করে বলতো এই দেশ আমার বাপ-দাদার আমরা পালাবো না। তারা জাতির কাছে দেওয়া ওয়াদা রক্ষা করতে পারেনি। কারণ তারা আল্লাহকে ভয় করতেন না। তাদের অন্যায় বিচারের আশ্বাস দিয়ে বলেন আমরা তাদের বিচার চাই। যে যেখানে থাকুক। ন্যায় বিচারের মাধ্যমে তাদের বিচার করা হবে।
এই সময়ে সবচেয়ে বেশি জুলুম করা হয়েছে আলেম ওলামাদের ওপর। তাদের ডা-াবেড়ি পড়িয়ে আদালতে হাজির করা হয়েছে। একজেল থেকে আরেক জেলে নেওয়া হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগে। তাদের চোখের পানি আর রক্ত বৃথা যায়নি।
তিনি উপস্থিত কর্মীদের কাছে দোয়া চান এবং বলেন, আপনারা দোয়া করবেন আমরা যেন জাতির জন্য ভাল কিছু করতে পারি। যুবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, সবার ঘরে ঘরে আপনার কল্যানের বার্তা পৌঁছে দিন।
মোবারক হুসাইন বলেন, ১৫ বছর জালিম সরকারের নির্যাতনে জামায়াতের হাজার হাজার নেতাকর্মী পঙ্গু হয়েছে। ৫ আগস্ট তাদের বিদায়ে আমাদের সুন্দর পরিবেশ ফিরে এসেছে। তিনি বলেন জামায়াতে ইসলামী ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ঝিনাইদহকে ইসলামের জন্য একটি উর্বর জায়গা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই জায়গাকে একটি ইনসাফপূর্ন সমাজ কায়েমের জায়গা হিসেবে দেখতে চাই। তিনি প্রাপ্ত সুযোগকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন আসুন আমরা সুযোগকে কাজে লাগাই। ইসলামের দাওয়াত নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌছি। সমাজ কল্যানমূলক কাজ করি। মানুষের মধ্যে একটা আশা জাগাই।মানুষ যেন আমাদের পেছনে এসে দাড়াতে পারে।