

আলি হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের বড় মরাপাগলা গ্রামে ঘটল হৃদয়বিদারক এক ঘটনা। বাবার মৃত্যুতে যেখানে পুরো পরিবার একত্র হয়ে শেষ বিদায় জানানোর কথা, সেখানে সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বে স্ত্রী ও মেয়েরা আটকে দিলেন মৃত স্বামীর/বাবার লাশ দাফন।
গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা যান গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি মাজেদ বিশ্বাস। কিন্তু মৃত্যুর পরও শান্তি মিলল না তার নিথর দেহের। নিজেরই মেয়ে ও স্ত্রী সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলে বাবার লাশ দাফনে বাধা দেন। কান্নায় ভেঙে পড়েন মেয়েরা, মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে থাকেন এলাকাবাসী। জানা গেছে, মাজেদ বিশ্বাসের প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর প্রায় ২০ বছর আগে তিনি বিয়ে করেন হানফু খাতুনকে। সংসার জীবনে ভালোই চলছিল দিন। তবে প্রায় ১০ বছর আগে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন মাজেদ। এই দুর্বলতার সময়েই তার দুই ছেলে পুলিশ সদস্য আব্দুল জাব্বার ও লতিফুর রহমান বাবার সব সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখিয়ে নেন। চিকিৎসার আশ্বাসে বাবাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যান তারা। কিন্তু সেই চিকিৎসা আর জীবনের আলোর মুখ দেখাতে পারেনি। গতকাল রাতে যখন বাবার নিথর দেহ গ্রামে ফিরিয়ে আনা হলো, তখনই বাধে বিপত্তি। স্ত্রী হানফু খাতুন ও মেয়েরা ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে জানিয়ে দেন, এই সম্পত্তি নিয়ে অন্যায় হওয়ায় তারা লাশ দাফনে অনুমতি দেবেন না। গ্রামের মানুষও বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে পাশে দাঁড়ায়।
আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত কাফনে মোড়ানো অবস্থায় পড়ে ছিল মাজেদ বিশ্বাসের লাশ। তাকে ঘিরে কান্নার রোল ওঠে। মানুষজন বুকে হাত রেখে সালিশে বসে সমাধানের পথ খোঁজেন। কিন্তু দুপুর একটা পর্যন্তও কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। মৃত মাজেদ বিশ্বাস যেন জীবনের শেষ অধ্যায়েও বিচার পাওয়ার অপেক্ষায় পড়ে আছেন। গ্রামের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে এক অসমাপ্ত বিদায়ের বিষাদে।